০২:৪৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাবেক মন্ত্রী শম রেজাউল পরিবারের ব্যবসায়িক অংশীদার শাহিন আলমের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অভিযোগ।

  • প্রতিনিধির নামঃ
  • আপলোডের সময় ০৮:১৮:১৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫
  • ৫৫৮৪ সময় ভিজিটর

-বিশেষ প্রতিনিধি

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার বড়ইবুনিয়ার বাসিন্দা শাহীন আলম এক সময় ছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ও তার ছোট ভাই শাহীন ও শামীমের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। সেই রাজনৈতিক পরিচয় আর দলের ছত্রছায়ায় থেকেই তৈরি করেছেন এক বিশাল অবৈধ সম্পদের সাম্রাজ্য। এখন তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, মাদক ব্যবসা, সম্পদ পাচার ও রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতসহ একাধিক অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি শাহীন আলমের ছোট ভাই মো. শামীম শেখ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন, যেখানে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।

🔍 রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা থেকেই ক্ষমতার অপব্যবহার
অভিযোগ অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় মন্ত্রী রেজাউল করিমের ভাইদের সঙ্গে ব্যবসায়িক অংশীদারত্ব গড়ে তোলেন শাহীন। মন্ত্রীর ভাইদের কাছে নিজেকে বিশ্বস্ত হিসেবে উপস্থাপন করে রাজনৈতিক প্রভাব লাভ করেন তিনি। এমনকি সরকারের পতনের (৫ আগস্ট) পর মন্ত্রীর ভাইয়েরা দেশ ত্যাগ করার সময় ১৬ বস্তা নগদ অর্থ ও সোনার অলংকার শাহীন আলমের কাছে গচ্ছিত রেখে যান বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।

💰 অবৈধভাবে গড়ে তোলা সম্পদের পাহাড়
দুদকে দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়,

ঢাকার মিরপুর-১১ নম্বর শিয়ালবাড়িতে শাহীন আলম ৫টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ক্রয় করেন।

একই এলাকায় দুটি গার্মেন্টস ব্যবসা কিনে নেন।

গ্রামের বাড়ি নাজিরপুরের বড়ইবুনিয়া এবং শ্বশুরবাড়ি গোপালগঞ্জ টুঙ্গিপাড়ার গহরডাঙ্গা এলাকায় বিপুল পরিমাণ জমি কিনেছেন।
এছাড়াও নিজের ও পরিবারের চলাচলের জন্য রয়েছে একাধিক দামি গাড়ি, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে অভিযোগ করেন প্রতিবেদকের কাছে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংকের তার ও তার আত্মীয়-স্বজনের নামে গচ্ছিত রয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।

শেখ হাসিনা পতনের পর সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ও তার পরিবারের আস্থাভাজন হওয়ায় বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ শাহীন আলম এর কাছে গচ্ছিত রেখে দেশত্যাগ করেন।

শামীম শেখ অভিযোগপত্রে প্রশ্ন তুলেছেন—

“সাধারণ ঘরের সন্তান শাহীন আলম, যিনি উচ্চশিক্ষিত নন, তিনি কীভাবে এত অল্প সময়ের মধ্যে এত সম্পদের মালিক হলেন?”

🚨 মাদক কারবার ও সন্ত্রাসের অভিযোগ
অভিযোগ অনুসারে, শাহীন আলম এক সময় থেকেই মাদক ব্যবসার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। রাজনৈতিক পরিচয় কাজে লাগিয়ে প্রশাসনের একাংশকে প্রভাবিত করে কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন। এলাকায় তার পালিত মাস্তান বাহিনী রয়েছে যারা সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।

নাজিরপুর এলাকার অনেক বাসিন্দার বরাতে জানা গেছে,

শাহীন আলমের বিরুদ্ধে অতীতেও বিভিন্ন মিডিয়ায় অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে এবং অধিকাংশ গণমাধ্যমে তার মাদক ব্যবসার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের সাক্ষ্য দিয়েছেন তার ছোট ভাই শামীম, তার মা ও এলাকার অনেকেই।
এলাকাবাসীর অনেকেই মনে করেন যেহেতু তার ছোট ভাই ও গর্ভধারিণী মা তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগ করেছেন অবশ্যই সেটা তদন্ত করে দেখা উচিত।

কিন্তু তিনি টাকার বিনিময়ে সেসব ধামাচাপা দিতে সক্ষম হয়েছেন যে কারণে অভিযোগগুলো আর আলোর মুখ দেখেনি।

📂 আইনি প্রক্রিয়ার দাবি
অভিযোগকারী মো. শামীম শেখ দুদকের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন—

“আমি নিজ ভাইয়ের বিরুদ্ধে সত্য উদঘাটনের জন্যই অভিযোগ দিয়েছি। এই বিষয়গুলো সুষ্ঠু তদন্ত করে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা চলমান এবং কারা কারা তাদের ঘনিষ্ঠ ছিল তাদেরও তালিকা তৈরি করে অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

এই বিষয়ে ব্যবসায়ী শাইন আলমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় পোস্ট

বটিয়াঘাটা গোসলের সময় পানিতে এক শিশুর মৃত্যু।

সাবেক মন্ত্রী শম রেজাউল পরিবারের ব্যবসায়িক অংশীদার শাহিন আলমের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অভিযোগ।

আপলোডের সময় ০৮:১৮:১৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫

-বিশেষ প্রতিনিধি

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার বড়ইবুনিয়ার বাসিন্দা শাহীন আলম এক সময় ছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ও তার ছোট ভাই শাহীন ও শামীমের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। সেই রাজনৈতিক পরিচয় আর দলের ছত্রছায়ায় থেকেই তৈরি করেছেন এক বিশাল অবৈধ সম্পদের সাম্রাজ্য। এখন তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, মাদক ব্যবসা, সম্পদ পাচার ও রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতসহ একাধিক অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি শাহীন আলমের ছোট ভাই মো. শামীম শেখ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন, যেখানে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।

🔍 রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা থেকেই ক্ষমতার অপব্যবহার
অভিযোগ অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় মন্ত্রী রেজাউল করিমের ভাইদের সঙ্গে ব্যবসায়িক অংশীদারত্ব গড়ে তোলেন শাহীন। মন্ত্রীর ভাইদের কাছে নিজেকে বিশ্বস্ত হিসেবে উপস্থাপন করে রাজনৈতিক প্রভাব লাভ করেন তিনি। এমনকি সরকারের পতনের (৫ আগস্ট) পর মন্ত্রীর ভাইয়েরা দেশ ত্যাগ করার সময় ১৬ বস্তা নগদ অর্থ ও সোনার অলংকার শাহীন আলমের কাছে গচ্ছিত রেখে যান বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।

💰 অবৈধভাবে গড়ে তোলা সম্পদের পাহাড়
দুদকে দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়,

ঢাকার মিরপুর-১১ নম্বর শিয়ালবাড়িতে শাহীন আলম ৫টি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ক্রয় করেন।

একই এলাকায় দুটি গার্মেন্টস ব্যবসা কিনে নেন।

গ্রামের বাড়ি নাজিরপুরের বড়ইবুনিয়া এবং শ্বশুরবাড়ি গোপালগঞ্জ টুঙ্গিপাড়ার গহরডাঙ্গা এলাকায় বিপুল পরিমাণ জমি কিনেছেন।
এছাড়াও নিজের ও পরিবারের চলাচলের জন্য রয়েছে একাধিক দামি গাড়ি, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে অভিযোগ করেন প্রতিবেদকের কাছে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংকের তার ও তার আত্মীয়-স্বজনের নামে গচ্ছিত রয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।

শেখ হাসিনা পতনের পর সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ও তার পরিবারের আস্থাভাজন হওয়ায় বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ শাহীন আলম এর কাছে গচ্ছিত রেখে দেশত্যাগ করেন।

শামীম শেখ অভিযোগপত্রে প্রশ্ন তুলেছেন—

“সাধারণ ঘরের সন্তান শাহীন আলম, যিনি উচ্চশিক্ষিত নন, তিনি কীভাবে এত অল্প সময়ের মধ্যে এত সম্পদের মালিক হলেন?”

🚨 মাদক কারবার ও সন্ত্রাসের অভিযোগ
অভিযোগ অনুসারে, শাহীন আলম এক সময় থেকেই মাদক ব্যবসার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। রাজনৈতিক পরিচয় কাজে লাগিয়ে প্রশাসনের একাংশকে প্রভাবিত করে কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন। এলাকায় তার পালিত মাস্তান বাহিনী রয়েছে যারা সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।

নাজিরপুর এলাকার অনেক বাসিন্দার বরাতে জানা গেছে,

শাহীন আলমের বিরুদ্ধে অতীতেও বিভিন্ন মিডিয়ায় অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে এবং অধিকাংশ গণমাধ্যমে তার মাদক ব্যবসার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের সাক্ষ্য দিয়েছেন তার ছোট ভাই শামীম, তার মা ও এলাকার অনেকেই।
এলাকাবাসীর অনেকেই মনে করেন যেহেতু তার ছোট ভাই ও গর্ভধারিণী মা তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগ করেছেন অবশ্যই সেটা তদন্ত করে দেখা উচিত।

কিন্তু তিনি টাকার বিনিময়ে সেসব ধামাচাপা দিতে সক্ষম হয়েছেন যে কারণে অভিযোগগুলো আর আলোর মুখ দেখেনি।

📂 আইনি প্রক্রিয়ার দাবি
অভিযোগকারী মো. শামীম শেখ দুদকের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন—

“আমি নিজ ভাইয়ের বিরুদ্ধে সত্য উদঘাটনের জন্যই অভিযোগ দিয়েছি। এই বিষয়গুলো সুষ্ঠু তদন্ত করে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা চলমান এবং কারা কারা তাদের ঘনিষ্ঠ ছিল তাদেরও তালিকা তৈরি করে অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

এই বিষয়ে ব্যবসায়ী শাইন আলমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।